ঢাকা , সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ , ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
দাবি পূরণের আশ্বাসে বিচারকদের কলম বিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধসহ ১০ দাবি কোয়াবের আগামী বছর ২৮ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক কুমিল্লায় ছাত্রলীগের ৪৪ নেতাকর্মী আটক শিক্ষাখাতে ব্যয়ের একটি অংশ সরকারকে বহন করতে হবে : নুর রাশিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োগ সিন্ডিকেটে ভয়াবহ প্রতারণা ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ১১৩৯ মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৪ বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ ৮ দাবিতে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ ঢাকা এখন পোস্টার-ব্যানারের নগরী বিচারকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট আন্ডারওয়ার্ল্ডে কদর বেড়েছে তরুণ কিলারদের আলু উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ‘আনন্দ ঝিলমিল’ নবীনবরণ ব্যক্তিগত সাফল্য দিয়ে ডি’অর জেতা সম্ভব নয় : কেইন স্পেনের কাছে পাত্তা পেলোনা জর্জিয়া এস্তেভাওয়ে মুগ্ধ আনচেলত্তি প্রথমবারের মতো আফ্রিকান দেশের বিপক্ষে জয় পেলো ব্রাজিল আরও একটি ক্লোজ ম্যাচ, হেরে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ রুতুরাজই থাকছেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক
* ব্যানার-পোস্টার সরাতে আজ ডিএনসিসির অভিযান

ঢাকা এখন পোস্টার-ব্যানারের নগরী

  • আপলোড সময় : ১৭-১১-২০২৫ ১২:১৯:২৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-১১-২০২৫ ১২:১৯:২৪ পূর্বাহ্ন
ঢাকা এখন পোস্টার-ব্যানারের নগরী
মাস তিনেক পর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী-নেতাদের ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগরের দেওয়াল। পোস্টারের হানা থেকে রেহাই পায়নি চব্বিশের দেওয়ালচিত্রও। অধিকাংশ গ্রাফিতিই এখন পোস্টারে ঢাকা। নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি অন্য পোস্টারও চোখে পড়ার মতো। নির্বাচন কমিশন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এরই মধ্যে আগাম পোস্টার সরিয়ে ফেলতে বলা হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। নির্বাচনে পোস্টার ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসি। পোস্টার-ব্যানারে রীতিমতো শ্রীহীন শহর ঢাকা। তারপরও পোস্টার লাগানো ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। দেওয়ালগুলো পরিচ্ছন্ন করার কোনো উদ্যোগও নেই। আইন থাকলেও নেই তার প্রয়োগ।
নগরবাসীর অভিযোগ, সাধারণত যে কোনো দিবসের আগে নগরের দেওয়ালে পোস্টার, সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে যায়। এখন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের পোস্টার লাগানোর হিড়িক পড়েছে। ‘দেওয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ’ এমন সতর্কবার্তা লিখেও নিস্তার পাচ্ছেন না বাড়ি ও ভবন মালিকরা। বাদ যায়নি মেট্রোরেলের পিলারগুলোও। সেখানে আঁকা গ্রাফিতিও ঢাকা পড়েছে পোস্টারে। ফলে নোংরা হচ্ছে শহর, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য। কিন্তু হেলদোল নেই নগর কর্তৃপক্ষের।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে অধিকাংশ ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। এগুলো অপসারণ করতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু তারপরও যত্রতত্র পোস্টার লাগানোর প্রবণতা কমছে না। গণঅভ্যুত্থানের পর পোস্টার অপসারণে ডিএনসিসিতে কিছু কার্যক্রম চোখে পড়েছে। কিন্তু ডিএসসিসির কোনো তৎপরতা নেই। আমরা চাই শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। এ বিষয়ে বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, যদিও নগরে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধে ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। তারা নগরের আলাদা স্থানে অর্ধশতাধিক বোর্ড স্থাপন করেছে। তবে এসব বোর্ডে তেমন সুফল মিলছে না। আগের মতোই নির্ধারিত স্থানে না লাগিয়ে অলিগলির দেওয়াল, পদচারী সেতু, বৈদ্যুতিক বাতির খুঁটিতে পোস্টার লাগানো হচ্ছে।
নিউ ইস্কাটন এলাকাটি ঢাকা-৮ আসনের। এ এলাকায় দুই বছর আগে ১৬ ফুট বাই ৬ ফুট সাইজের একটি বোর্ড স্থাপন করে ডিএনসিসি। এই বোর্ডের ওপরের অংশে কালো কালি দিয়ে লেখা ‘পোস্টার লাগানোর নির্ধারিত স্থান’। অথচ সেখানে শুধু টু-লেট সাঁটানো কাগজ দেখা যায়। রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পোস্টার লাগানো রয়েছে আশপাশের দেওয়ালে। এছাড়া খামারবাড়ি মোড়, ফার্মগেট, তেজগাঁও, নিউ ইস্কাটন এলাকার বোর্ডগুলো এবং আশপাশের দেওয়ালেও একই চিত্র দেখা গেছে।
আইন আছে, কার্যকারিতা নেই : ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত স্থান বাদে অন্য কোনো দেওয়াল বা স্থানে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ। আইন না মানলে জেল-জরিমানার বিধান আছে। ওই আইনের কথা উল্লেখ করে দেওয়ালে পোস্টার লাগানো বন্ধে বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দিচ্ছে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি।
গণবিজ্ঞপ্তিতে সংস্থা দুটি বলেছে, দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে। দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ অনুসরণের জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কেউ বিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও এ ধরনের আইনের প্রয়োগ কখনো দেখা যায়নি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, নগরের দেওয়ালে পোস্টার খুবই দৃষ্টিকটু। পোস্টারের এ অপসংস্কৃতি বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি যে বা যারা পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুন লাগান, সেখানে কিন্তু তাদের নাম-ঠিকানা থাকে। সিটি করপোরেশনের উচিত তাদের নামে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর পোস্টার অপসারণে ডিএনসিসিতে কিছু কার্যক্রম চোখে পড়েছে। কিন্তু ডিএসসিসির কোনো তৎপরতা নেই। আমরা চাই শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।
ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে অবৈধ ব্যানার-বিলবোর্ড উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে ‘পরিচ্ছন্নতা বছর-২০১৬’ শুরু করেছিল ডিএসসিসি। টানা অভিযানে ছয় মাসের মাথায় ডিএসসিসির অধীন অধিকাংশ সড়ক থেকে সব অবৈধ বিলবোর্ড ও ব্যানার অপসারণ করা হয়। এরপর নতুন করে যেখানেই অবৈধ বিলবোর্ড ও ব্যানার লাগানো হয়, তা ভেঙে ফেলে সংস্থাটি। প্রায় একইভাবে ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ সেøাগান ২০১৬ সাল থেকে ব্যানার-বিলবোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে ডিএনসিসি। এই ধারা ২০২১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পরে ২০২৩ সালের জুনে যত্রতত্র পোস্টারের লাগাম টেনে ধরতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট বোর্ড স্থাপন শুরু করে ডিএনসিসি। তারই অংশ হিসেবে মিরপুর, কাজীপাড়া, আগারগাঁও, খামারবাড়ি মোড়, ফার্মগেট, বাংলামোটর, রায়েরবাজারসহ অর্ধশতাধিক স্থানে বোর্ড স্থাপনা করে সংস্থাটি। কিন্তু তারপরও যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধ হয়নি। ২০২৫ সালের ৫ আগস্টের পর ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি এলাকায় বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের ব্যানার-পোস্টার কয়েকগুণ বেড়েছে।
ডিএনসিসির গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট, ভাসানটেক থানা এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন গঠিত। এ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আট থেকে ১০ জন সংসদ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) নেতাদের পোস্টার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এসব দলের প্রার্থীদের পোস্টারের কারণে বহুতল ভবন থেকে পার্ক, খেলার মাঠ বা সবুজ উদ্যানও রেহাই পায়নি। বিশেষ করে গুলশান-১ নম্বর মোড়ে নাভানা টাওয়ারের বিশাল দেওয়ালজুড়ে দেখা যাচ্ছে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের একটি ব্যানার। এছাড়া অলি-গলি সব জায়গায় তার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। যদিও ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে নির্বাচন করে ছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ। কিন্তু তিনি এবার ঢাকা-১৭ আসনেই প্রচারণা বেশি চালাচ্ছেন। নির্বাচনী পোাস্টার ও প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ আসনে প্রার্থী হওয়া এখনো চূড়ান্ত নয়। তাহলে কেন আইন না মেনে পোস্টার লাগাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি সংযোগ কেটে দেন। রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা আবু তালুকদার। সম্প্রতি দেওয়ালে পোস্টার লাগানো নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। আবু তালুকদার বলেন, আট-দশ বছর আগে ব্যানার-পোস্টার অপসারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বেশ তৎপর ছিল। কিন্তু এখন তাদের কোনো তৎপরতা নেই। বিশেষ করে পোস্টার, ব্যানার অপসারণে ডিএসসিসির কোনো কার্যক্রম নেই। এভাবে একটি শহর চলতে পারে না। নগর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। গত ৬ নভেম্বর ডিএনসিসির নগর ভবনে ‘ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ কার্যক্রম’ বিষয়ে এক সভা করেন সংস্থাটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। সভা শেষে ডিএনসিসির জনসংযোগ বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ডিএনসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে গত এক মাসে এক লাখ ২৫ হাজার অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে। অথচ নগর ভবনের সামনে গুলশান-২ নম্বর, গুলশান-১, বনানীর রাস্তাঘাট ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে রয়েছে এখন। গত শনিবার মিরপুরে অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। জানতে চাইলে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নগরের দেওয়ালে পোস্টার বা গাছে ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে ডিএনসিসি নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি সম্প্রতি যারা পোস্টার লাগাচ্ছেন, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএনসিসি তৎপর। তারপরও পোস্টার লাগানোর প্রবণতা কমছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, এ প্রবণতা কমাতে আমরা চেষ্টা করছি। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পোস্টার লাগানোর প্রবণতা বন্ধ বা অপসারণে কোনো উদ্যোগ নেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। অথচ উত্তরের চেয়ে দক্ষিণের আবাসিক বাসাবাড়ি, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার বেশি। এর মধ্যে ঢাকার পল্টন, নয়াপল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, নিউমার্কেট, লালবাগসহ রাজধানীর অন্য এলাকায়ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কোচিং সেন্টারের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলামকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এখন করপোরেশনে মেয়র নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনজন প্রশাসক রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন। নগরের সৌন্দর্য নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এখনো একই তালে চলছে ডিএসসিসি।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স